সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

সিলেট এক্সপ্রেস ডেস্ক: ৯১ লাখ টাকা আত্মসাতের চারটি চেক ডিজঅনার মামলায় সাজা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ান জারি হওয়ার দুই বছরেও এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। সাজাপ্রাপ্ত ওই আসামি প্রকাশ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন এবং মামলার বাদিকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল সোমবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার বারকোট গ্রামের মো. দৌলা মিয়ার পুত্র আব্দুস সামাদ।
লিখিত বক্তব্যে আব্দুস সামাদ বলেন, আত্মীয়তার সূত্রে সিলেট নগরের মজুমদারী কমলাবাগানের ১০৫ নং বাসার বাসিন্দা এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলার রানাপিং গ্রামের মোস্তফা জামালের পুত্র মুহিজুল মোস্তফার সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক ছিল। মুহিজুল একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হওয়ায় মনে করেছিলাম তাদের সঙ্গে থাকলে হয়তো আমিও ভালো ব্যবসা-বানিজ্য করতে পারবো। আর সেই বিশ্বাসই আমার জীবনে এখন কাল হয়ে দাড়িয়েছে।
তিনি বলেন, আমার সরলতার সুযোগে বিভিন্ন ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে সে একে একে আমার কাছ থেকে ৯১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাত করেছে। এসব টাকা নিয়ে ৯টি ভাউচার ট্রাক কিনেছে। অধিকাংশ টাকাই চেক মারফতে গ্রহণ করেছে। বিনিময়ে সে আমার বিশ্বস্থতা রক্ষার জন্য ৬ টি চেকে ৮২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার চেক প্রদান করে এবং স্টাম্পে স্বাক্ষর করে ৯ লক্ষ টাকা নগদ নেয়। কথা ছিলো তাদের যেসব ব্যবসা করবে সেগুলোতে আমাকে শরিক করবে, আরো গাড়ি নামাবে। ব্যবসা সম্প্রসারণ করবে। সম্প্রসারণ ঠিকই হয়েছে কিন্তু আমার ভাগ্যে কিছু জুটেনি প্রতারণা ছাড়া অন্য কিছু। ব্যবসার মুনাফা কিংবা পার্টনার হওয়ার সুযোগ পাইনি। এক পর্যায়ে বছর খানেক পর সে তার আসল চেহারা দেখাতে শুরু করে। আমার ফোন ধরা বাদ দেয়। টাকা দিচ্ছি দিব বলে সময় ক্ষেপন করতে থাকে। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আমাকে শুধু ঘুরাতেই থাকে। ফলে আমি তার পিতা এবং চাচা পেট্রোলিয়াম ব্যবসায়ী মোস্তফা কামালের দ্বারস্থ হই। তার এলাকা গোলাপগঞ্জের সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকেও অবহিত করি। কারো কাছে কোনো প্রতিকার পাইনি। উল্টো আমার মনে হয় তার চাচা মোস্তফা কামালও সব জেনে বুঝে নিজের ভাতিজা কে রক্ষার চেষ্টা করতে থাকেন। তখন বিষয়টি আমি আমার এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গকেও অবহিত করি।
পরে বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নেই। তার দেয়া চেকগুলো ব্যাংকে জমা দিলে প্রতিটিই ডিজঅনার হয়। আমি আইনজীবী মারফতে সে গুলো দিয়ে আদালতে পর পর পাঁচটি মামলা দায়ের করি। ইতোমধ্যে বিজ্ঞ আদালত চারটি মামলার রায় আমার পক্ষে দিয়েছেন। রায়ে টাকা ফেরত প্রদান এবং তাকে কারাদন্ডসহ জরিমানা করা হয়েছে। ২০১৬ ও ১৭ সালের বিভিন্ন তারিখে এসব মামলার রায়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য সাজাপ্রাপ্ত এই মুহিজুল মোস্তফা আজও গ্রেপ্তার হয়নি। আদালতের নির্দেশ মতো আমার টাকাও ফেরত দেয়নি। অথচ তাকে দক্ষিণ সুরমা থানার লাউয়াইয়ের ওয়াজেদ আলী পেট্রোলপাম্পে বসে ব্যবসা করতে দেখা যায়। গোলাপগঞ্জের রানাপিংয়ে তার বাড়িতে নির্মাণ কাজ তদারকি করতেও দেখা যায়। সবখানে গাড়ি নিয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে দেখা যায়। আর এসব দেখে আমার মতো একজন সাধারণ নাগরিক আশ্চর্যান্বিত না হয়ে পারিনা।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই দুপুর দেড়টায় আমাকে আদালত পাড়ার কাছ থেকে সন্ত্রাসী দিয়ে অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছিল। আমার কাছ থেকে চেকগুলো ছিনতাইরও চেষ্টা করা হয় এবং আদালতে আর না আসার জন্য হুমকি দেওয়া হয়। পুলিশ সেদিন আমাকে তাদের কবল থেকে রক্ষা করেছে। জীবনের ঝুকি নিয়ে দিনের পর দিন আদালতে মামলায় লড়ে ন্যায় বিচার পেয়েছি। কিন্তু দুই বছরেও আদালতের নির্দেশ মত আমার টাকা ফেরত পাইনি। উল্টো ইদানিং আমার চলাফেরায় নজরদারি করা চলছে বলে আমার মনে হচ্ছে। আমাকে তারা নানাভাবে বিষয়টি মিটমাট করার জন্য চাপ দিচ্ছে। ফলে আমি আমার জানমালের ক্ষতির আশংকা করছি। এ ধরণের আশঙ্কায় আমি সম্প্রতি সাধারণ একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছি। এখন আমার মনে হচ্ছে এই টাকা আত্মসাতের সঙ্গে তাদের পরিবারের সকল সদস্যরাই জড়িত। তিনি বলেন, বর্তমানে অর্থকড়ি, ব্যবসা বাণিজ্য সব হারিয়ে তিনি পথে বসার উপক্রম। মায়ের চিকিৎসা করাতে পারছেন না, ভাই বোনের লেখাপড়ার খরচ যোগাতেও হিমশিম খাচ্ছেন। অথচ মোস্তফা কামাল ও তার ভাতিজা মুহিজুল মোস্তফা তার টাকা দিয়েই বিলাসিতা করছেন। তিনি তার জানমাল রক্ষা এবং টাকা উদ্ধারে সরকারের সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।