সিলেটে করোনা ২০ শতাংশের নিচে নেমেছে

সুনীল সিংহ:
সিলেটে করোনা শনাক্তের হার শতকরা ২০ শতাংশের নিচে নেমেছে। দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস পর এমন স্বস্তিদায়ক সংবাদ এসেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গতকাল বুধবার এ বিভাগে ২২৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে ৪১৪ জনের। শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ২৮ ভাগ।
সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের ২৫ জানুয়ারীর আগে সিলেটে শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নীচে ছিল। শনাক্তের হার ক্রমশ বৃদ্ধির পর গত ১ জুলাই শনাক্তের হার দাঁড়ায় ২৯ দশমিক ০৯ ভাগ। এদিন ৬৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয় ১৯৯ জনের। আর ১০ জুলাই সিলেটে বিভাগে শনাক্তের হার ছিল সর্বোচ্চ ৫৫ দশমিক ৪১ ভাগ। এদিন ৭১১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৯৪ জন করোনা শনাক্ত হয়।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট জেলায় ৬৭৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ১১ শতাংশ। সুনামগঞ্জ জেলায় ৪৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৭৯ জন শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। হবিগঞ্জ জেলায় ৬৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০৮ জনের পজিটিভ শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং মৌলভীবাজার জেলায় ৪৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০৪ জন শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
সিলেটের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হিমাংশু লাল রায় জানান, সরকারের দেয়া কঠোর লকডাউন এর ফলে শনাক্তের হার কমে আসছে। আর সপ্তাহ দিনে পরে এ ধারা অব্যাহত থাকলে বুঝতে হবে সংক্রমণ কমতির দিকে। তিনি আরো বলেন, সংক্রমণ কমছে বলে লোকজন উদাসীন হলে (যেমন- স্বাস্থ্য বিধি মানা, মাস্ক ব্যবহার না করা, জন সমাগম করা) হিতে বিপরীত হতে পারে।
তিনি জানান, আগামী ২৬ আগস্টের মধ্যে আ্যস্ট্রেজেনেকা (কোভিশিল্ড) এর দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া শেষ হবে। যাদের এখনও মোবাইলে ম্যাসেজ যায়নি তাদেরকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করে টিকার ব্যবস্থা করতে হবে।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. ময়নুল হকের মতে, মানুষের মধ্যে আগের চেয়ে মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতা ও টিকা নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এ কারণে শনাক্তের হার কমতির দিকে। আত্মসচেতনতা, সমাগম এড়ানোর এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে শনাক্তের হার কমতে থাকবে বলে তার মন্তব্য। তিনি বলেন, ডাবল ডোজ টিকা নেয়া ব্যক্তিদের করোনায় আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কম।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওসমানী হাসপাতালে সবসময় জটিল ও পজিটিভ রোগী বেশী থাকে। এর মধ্যে গতকাল বুধবার ওসমানীর ল্যাবেও শনাক্তের হার ছিল ৩০ শতাংশের নীচে। তবে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন ল্যামডা ভেরিয়েন্ট এর আঘাত যেন না আসে আমাদের দেশে। কারণ ল্যামডা ভেরিয়েন্ট ডেল্টা ভেরিয়েন্ট থেকেও শক্তিশালী ও বহুরূপী।
সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা: নুরে আলম শামীম জানান, জাতীয়ভাবে শনাক্তের হার ১৭ হলেও সিলেটে শনাক্তের হার ১৮ এর ওপরে। শনাক্তের হার কয়েকদিন পর্যবেক্ষণ করে বোঝা যাবে-আসলেওই পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে।
সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা: আনিসুর রহমান জানান, শনাক্তের হার শতকরা ২০ এর নিচে নামা স্বস্তিদায়ক। আগামী শীত পর্যন্ত শনাক্তের হার কমতে পারে বলে আশা এ চিকিৎসকের। তার মতে, এ অবস্থায় মানুষজনকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তবে, পর্যটন স্পট খুলে দেয়ায় পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নেয় তা দেখার বিষয়।
২৪ ঘন্টায় ১২ জনের মৃত্যু
সিলেট বিভাগে মহামারি করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘন্টায় (মঙ্গলববার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্ত হয়েছে ৪১৪ জনের। এ সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৩ জন। আর করোনা থেকে মুক্ত হয়েছেন ৬৫০ জন।
স্বাস্থ্য বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত ৪১৪ জনের মধ্যে সিলেট জেলার ৮১ জন, সিলেট ওসমানী হাসপাতালের ৪২ জন, সুনামগঞ্জ জেলার ৭৯ জন, হবিগঞ্জ জেলার ১০৮ জন ও মৌলভীবাজার জেলার ১০৪ জন।
আর, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে মারা যাওয়া ১২ জনের মধ্যে সিলেট জেলার ৯ জন, সিলেট ওসমানী হাসপাতালের ১ জন, সুনামগঞ্জ জেলার ১ জন ও হবিগঞ্জ জেলার ১ জন। এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৯৩১ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৬৭৯ জন, সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ৭৬ জন, সুনামগঞ্জ জেলার ৬২ জন, হবিগঞ্জ জেলার ৪৫ জন ও মৌলভীবাজার জেলায় ৬৯ জন।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগের মধ্যে সিলেট জেলার ১৯ জন, ওসমানী হাসপাতালের ২৯ জন ও মৌলভীবাজার জেলার ৫ জন করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চার জেলায় বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৫৪১ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৪৪০ জন, সুনামগঞ্জ জেলায় ৩৮ জন, হবিগঞ্জ জেলায় ৩৮ জন ও মৌলভীবাজার জেলায় ২৫ জন।
এছাড়া, সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২৬৭ জন। এর মধ্যে ১৪৭ জন সন্দহজনক, ১০৯ জন পজিটিভ ও ১১ জন আইসিউ তে ভর্তি।
গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত করোনামুক্ত ৬৫০ জনের মধ্যে সিলেট জেলার ৩৪৯ জন, ওসমানী হাসপাতালের ৮ জন, সুনামগঞ্জ জেলার ৫৩ জন, হবিগঞ্জ জেলার ৭৩ জন ও মৌলভীবাজার জেলায় ১৬৭ জন।
এ পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হচ্ছে ৫০ হাজার ৪২ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলার ২৬ হাজার ৮৪৪ জন, ওসমানী হাসপাতালে ৪ হাজার ২১০ জন, সুনামগঞ্জ জেলার ৫ হাজার ৭৫৪ জন, হবিগঞ্জ জেলার ৬ হাজার ৪৪ জন ও মৌলভীবাজার জেলার ৭ হাজার ১৯০ জন।
অন্যদিকে, সিলেট বিভাগে করোনামুক্ত হয়েছেন ৩৮ হাজার ৪৪৫ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলার ২৪ হাজার ৪০০ জন, ওসমানী হাসপাতালে ৩৬৫ জন, সুনামগঞ্জ জেলার ৪ হাজার ৩০০ জন, হবিগঞ্জ জেলার ২ হাজার ৯৭৯ জন ও মৌলভীবাজার জেলার ৫ হাজার ৪০১ জন।