পেশাগত কাজে বাধা ও হুমকি বাংলাদেশে মত প্রকাশের ক্ষেত্র সংকুচিত করছে

আর্টিকেল নাইনটিন এর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদেন অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০১৮ সালে সাংবাদিক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী ও লেখক সহ মত প্রকাশের চর্চাকারিদের হত্যা, হুমকি ও পেশাগত কাজে বাধা দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। আর্টিকেল নাইনটিনের পর্যবেক্ষণে উঠে আসা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য- উপাত্ত নিম্নরূপ :
২০১৮ সালে আর্টিকেল নাইনটিন মতপ্রকাশের অধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত মোট ৪৬৩ টি ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড করেছে ; যা গত পাচঁ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ;
অধিকার লঙ্ঘনের শতকরা ৫১ ভাগ ঘটনাই ঘটেছে জাতীয় পর্যায়ে ঢাকায়
নারী কর্মীদের যৌননিপীড়ন-হয়রানির ঘটনার বেশীর ভাগই তথ্য-প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট;
২০১৮ সালে মতপ্রকাশ জনিত মোট ১৩১টি ঘটনায় আইনের অপব্যবহার করা হয়েছে।
শুধু মতপ্রকাশ জনিত কারনে মোট ৩১টি ফৌজদারী মানহানি মামলা দায়েরের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
৭১টি মামলা করা হয়েছে আইসিটি এ্যাক্টের ৫৭ ধারা ও ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টের আওতায় ;
৯টি বেআইনী আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনাসহ ২০টি বিভিন্ন ধরনের হয়রানিমুলক মামলার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
২০১৮ সালে মোট ২ জন সাংবাদিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন ;
১৯ জনমতপ্রকাশকর্মী মারাত্মক শারীরিক আঘাতের শিকার হয়েছেন এবং ;
১৫৬ জনমতপ্রকশের চর্চাকারী বিভিন্ন ভাবে শারীরিক আঘাতের শিকার হয়েছেন ;
আর্টিকেল নাইনটিন বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল মতপ্রকাশের অধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ।
তিনি বলেন,“বাংলাদেশে মতপ্রকাশ চর্চাকারিদের অবস্থা খুবই নাজুক, এক্ষেত্রে বাধা ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন আমাদের বুদ্ধি-ভিত্তিক চর্চার ক্ষেত্রকে অবদমিত করেছে. কেননা, এসব অনভিপ্রেত ঘটনা মানবাধিকারকর্মী, যোগাযোগকর্মী, লেখক, সাংবাদিক ও শিল্পী- সাহিত্যিকদের কন্ঠরোধে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে । ৩ মে ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যমদিবস’ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতিমত প্রকাশেরচর্চা সংক্রান্ত এসব অপরাধের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন ফারুখ ফয়সল। ”
গত পাচঁ বছরের পরিস্থিতি বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে গণমাধ্যমকর্মীদের নির্যাতন-হয়রানির প্রবণতা ও ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে। ২০১৮ সালেমত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে হুমকি ও নানা ধরণের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দমনের চিত্রই বেশী লক্ষণীয়। উদাহরণ হিসেবে বলাযায় , গত বছর মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে ৩১ টি ফৌজদারি মানহানির মামলা, আইসিটি এ্যাক্টের ৫৭ ধারা ও ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট সংক্রান্ত মোট ৭১ টি মামলাসহ আরও ৯ টি অবৈধ আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ এবং ২০টি অন্যান্য আইনি হয়রানি মুলক মামলার ঘটনা রয়েছে। বাংলাদেশ সাংবাদিকদের সুরক্ষা সংক্রান্ত জাতিসংঘের রেজ্যুলেশনে অনুস্বাক্ষর কারী (২০১৭) দেশ হওয়াসত্ত্বেও রাষ্ট্র মতপ্রকাশ সংক্রান্ত এসব অপরাধ ও ঘটনা সংশ্লিষ্টদের তদন্ত, গ্রেফতারের ক্ষেত্রে আনুপাতিক হারে কম আগ্রহী। ২০১৮ সালে ২ জন সাংবাদিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন, ১৯ জন গুরুতর শারীরিক আঘাতের শিকার এবং ১৫৬ জন নানান ধরণের শারীরিক আঘাতের শিকার হয়েছেন। আক্রান্তদের শতকরা ৫১ ভাগ ঢাকা কেন্দ্রিক । নারী সাংবাদিকরা যৌনহয়রানী ও পেশাগত কাজে বাধা গ্রস্ত হয়েছেন। পরিবীক্ষণকৃত তথ্য-উপাত্তেরভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে যে, সাংবাদিকরা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেত-কর্মী, আইন-শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়েছেন ।পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় বাধা/আক্রমন তো ছিলই।
এক নজরে ২০১৮ সালের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত :
২০১৮ সালে মতপ্রকাশ সংক্রান্ত মোট ৪৬৩ টি ঘটনা ঘটেছে; যা গত পাচঁ বছরের তুলনায় সর্বাধিক।
২১২ টি ঘটনা হুমকি সংক্রান্ত ; যা এযাবৎ সর্বোচ্চ। আইনি হয়রানি সংক্রান্ত ঘটনা ২০১৭ সালে ছিল সর্বোচ্চ যা ১৬৯টি।
শারীরিক আঘাতজনিত ঘটনা ২০১৭ সালেছিল ১১৩ টি; যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮ সালে হয়েছে মোট ১৫৬ টি ;
প্রতিবেদনে ২০১৮ সালে আইনের অপব্যবহার জনিত ঘটনা রয়েছে ৬০টি; এরমধ্যে ফৌজদারি মানহানি মামলা ৩১ টি, আইনবর্হিভূত গ্রেফতার ও তদন্ত ৯ টি এবং অন্যান্য আইনি হয়রানি সংক্রান্ত ঘটনা রয়েছে ২০ টি ।
২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২ জন সাংবাদিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন , ১৯ জন মারাত্নক শারীরিক আঘাতের শিকার, ১৫৬ জন বিভিন্ন রকমের শারীরিক আঘাত এবং ২২ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন।
আইসিটি ও ডিজিটাল এ্যাক্টের মাধ্যমে অনলাইন মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ ও সাময়িক বন্ধ বা ব্লক করার একাধিক ঘটনা ঘটেছে ২০১৮ সালে। এ ধরণের মোট ৮ টি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। উদাহরণ হিসেবে‘ দ্য ডেইলিষ্টার’, ’এশিয়ান এজ’ এবং ‘বিডিনিউজ ২৪’ উল্লেখযোগ্য ।
মতপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে নাগরিক সমাজ ও বিভিন্ন পেশাজীবিদের সভা-সমাবেশ ও প্রতিবাদে বাধাসংক্রান্ত ২৯ টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এ সব ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- কোটাসংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন, পরিবহণ ধর্মঘট, পোষাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর আন্দোলনসহ অন্যান্য আন্দোলন।
২০১৮ সালে অনলাইন এবং অফলাইনে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও প্রচার-প্রচারণার মোট ৩৭ টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এসব ঘটনার বেশীর ভাগই ছিল বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয় সংশ্লিষ্ট।
মতপ্রকাশ সংক্রান্ত ২০১৮ সালের প্রতিবেদনের মোট ঘটনার শতকরা ৮১ ভাগ অরাষ্ট্রীয় (ঘড়হব-ংঃধঃব) এবং শতকরা ১৯ ভাগ ঘটনার জন্য রাষ্ট্রীয় (ংঃধঃব) কর্তৃক্ষের সংশ্লিষ্টতা লক্ষ্য করা গেছে ।
প্রয়োজনে যোগাযোগ :
ফারুখ ফয়সল
আঞ্চলিক পরিচালক
আর্টিকেল নাইনটিন বাংলাদেশ ও দক্ষিণএশিয়া
মোবাইল : ০১৭৩০ ৭১০২৬৭ (হোয়াটস্আপ)
ইমেইল