আইসোলেশেনের দিনগুলো সাহস জুগিয়েছে সুহৃদের ভালোবাসা

16 - 16Shares
আব্দুল্লাহ আল আনসারী।।
একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালনে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আছে জানতাম।দায়িত্বপালন করতে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হই ১৯ তারিখের স্যাম্পুলে পজেটিভ আসে। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকি।
পরিবারের সদস্যরা কঠোর নিয়মকানুনের মাধ্যমে আমাকে আমার রুমে নিঃসঙ্গ রাখে।একা মনে হচ্ছিল শুরুতে। ধর্মীয় গ্রন্থ আর নেট নিয়ে সময় কাটত। আইসোলেশেনের দিনগুলো আমার জীবনের জন্য দারুণ এক শিক্ষা। কাজকর্ম না করায় কোলেস্টেরল ও মেদ বেড়েছে। অজানা আতঙ্ক।ডাক্তার ছোট ভাইয়ের অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ অন্যান্য সামগ্রীর সংগ্রহ,ডাক্তারী পড়–য়া মেয়ে আর মেয়ের মার কঠোর বিধি-নিষেধে নিজেকে কেমন করে তুলে। গরম পানি,ভেষজ সিদ্ধ,ফলমুল খেতাম প্রচুর। গারগল করতে হয়তো। খাদিমপাড়া ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিনসহ সকল চিকিৎসক কর্মকর্তা এবং অন্যান্য সহকর্মীগণ সাহায্য করেছে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে সিলেট শহীদ সামছুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের মেডিসিনের কনলাটেন্ট ডাঃ বিনায়ক ভট্ট্রাচার্যকে কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে ফোন দিতাম।প্রতিবারই তিনি আমাকে এবং আমার পরিবারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন।সময় পেলে তিনি নিজেে ফোন দিতেন। ডাঃ বিনায়ক ভট্ট্রাচার্য সকলের নিকট কতৃজ্ঞ।
তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন স্যার অফিসের কাজ দিয়ে ব্যস্থ রাখতেন।অনলাইনে কাজ গুলো করায় দিনের সময়টা ভালো কাটতো।করোনার লক্ষণ উপসর্গ নিয়ে পরিচিতরা ফোন করতেন,সাধ্য মতো সকলেকে পরামর্শ দেবার চেষ্টা করেছি।পরিচিত করো করোনা পজেটিভ আসলে তাঁকে নিজে থেকে অভয় দিয়ে ফোন করেছি। অসুখের দিনগুলোতেও মানুষের জন্য কিছু করতে পেরে ভালো লাগছিল।
সাংগঠনিক কারণে স্বাভাবিক সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগের সারাদেশের সহকর্মীদের যতো ফোন পেতাম, তার চেয়ে অনেক বেশিফোন আসতো । কষ্ট হয় এত ফোন ধরতে। নিজের আর স্বজন-সুহৃদদের ভয় ছিল। মনোবল জুগিয়েছেন চিকিৎসক কর্মকর্তাবৃন্ধ, সুহৃদ ও সহকর্মীরা।
সুহৃদ স্বাস্থ্য পরিবারের আহবায়ক গৌছ আহমদ চৌধুরী খুজ-খবর নিয়ে মনোবল জুগিয়েছেন।সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে করোনা আক্রান্ত সকলের জন্য ঈদ উপহার পাঠিয়ে কৃতজ্ঞ করেছেন।গণ মাধ্যমের বন্ধুরাও সাহস জুগিয়েছেন।
দেশজোড়ে থাকা আমার সকল সহকর্মীর কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।কৃতজ্ঞ দেশে-বিদেশে থাকা আমার সহপাঠিবন্ধুদের প্রতি।দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ফোন করে আমার প্রিয় সহকর্মীরা আমার খুঁজ-খবর নিয়েছেন। দেশে-বিদেশে থাকা আমার সহপাঠিবন্ধু,পরিচিতরা ফোন করে আমার প্রিয় সহকর্মীরা আমার খুঁজ-খবর নিয়েছেন ।
সহকর্মী আর সহপাঠীদের পাশাপাশি এলাকার মানুষের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। আমার বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপাড়া থানার গ্রামে। রমজান মাসের শেষ জুমায়, মসজিদে ঈদের জামাতে আমার জন্য দোয়া করেছেন এলাকাবাসী। এই খবর জানার পর নতুন করে নিজেকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করার স্বপ্ন দেখছি।
আমি আমার প্রিয় এলাকাবাসী,সহকর্মী,সহপাঠী ,বন্ধু-বান্ধব,শিক্ষক মন্ডলীসহ অন্যান্য মানুষের কাছ থেকে অনেক অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর বুঝতে পারি প্রিয় এলাকাবাসী,সহকর্মী,সহপাঠী ,বন্ধু-বান্ধব,শিক্ষক মন্ডলীসহ অন্যান্য মানুষ আমাকে কতটা ভালোবাসে। এই ভালোবাসার প্রতিদান তো আমার পক্ষে প্রতিশোধ করা সম্ভব নহে।
সর্বোপুরি কৃতজ্ঞতা মহান মাবুদের কাছে, যিনি করোনা আক্রান্ত করে আমাকে করোনামুক্ত ও করেছেন,নতুন জীবন দিয়েছেন আমাকে। যেদিন জানলাম করোনামুক্ত, অবিশ্বাস্য লাগছিল। বিশাল এক স্বস্তি নিয়ে বাসায় ফিরলাম।
করোনা কালে আমি যে দায়িত্বপালন করি তাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার সম্ভবনা প্রতিনিয়ত থাকে।একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করে থাকি। তারপরও কোথা থেকে যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলাম জানি না।উল্লেখ্য,আমি যে পদে নিয়োজিত চাকুরীবিধি অনুসারে স্যাম্পুল কালেকশনের দায়িত্বটা মূলত আমার না। কিন্তু দেশের বেশীর ভাগ প্রতিষ্টানে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (লাব) পদে লোক না থাকায় আমাদের উপর প্রশাসনিক দায়িত্ব ভর্তায়।প্রথম প্রথম মনে ভয় ছিলো।কাজটি সঠিকভাবে কনতে পারবো কিনা ? দেশে ও জাতির র্দুসময়ে ভয় নিয়ে ঘরে বসার সুযোগ ছিলো না।দেশে ও জাতির র্দুসময়ে নিজে কিছু করার সুযোগ কাজে লাগানোর সদ্দিচ্ছা তো ছিলো ্তাই ভয়কে জয় করে শুরু করালাম।প্রথমদিন সংগৃহিত নমুনার প্রায় ৬০% পজেটিভ হলো।
এক দিন সামান্য জ্বর গলা ব্যথা অনুভব করলাম। কল্পনা করতে পারিনি করোনাভাইরাসে আক্রমণ করেছে।মেডিসিন খেতে শুরু করলাম। রোগীর স্যাম্পুল সংগ্রহের সময় নিজের স্যম্পুল পরীক্ষার জন্য পাঠাই। মনে মনে প্রার্থনা করছিলাম যেন রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। যখন রিপোর্ট পজিটিভ এলো,তখনও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। চোখের সামনে ভেসে উঠল মা বাবা,স্ত্রী-সন্তান,ভাইবোন আতœীয় স্বজনের চেহারা। কান্না পাচ্ছিল আমি মরে গেলে ওদের কী হবে! আমার বৃদ্ধমা-বাবা কান্না শুরু করে দিলেন,আমার স্ত্রী ও কান্না শুরু করে দিলেন।আমি বললাম, ‘আমি সাহস রাখছি, তুমি সাহস রাখ।”এই সাহসের পাশ্বে মহান আল্লাহর পরম কৃপা ছিলো। সকলের ভালোবাসা ছিলো।
লেখক,আহবায়ক,বাংলাদেশ মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট(ইপিআই) এসোসিয়েশন।
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ হেলথ এসিসষ্ট্যান্ট এসোসিয়েশন।
মোবাইল ০১৭১৩৮০০৫২২
ঠিকানাঃ মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট(ইপিআই),খাদিমপাড়া ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল,সিলেট।
16 - 16Shares