অভিনন্দনঃ বিশ্বমানবৈক্য ও বিশ্বশান্তি প্রয়াসের কবি এখলাসুর রাহমান

ড. সফিউদ্দিন আহমদ:
এখলাসুর রাহমান বাস্তবতার কবি, সমাজ সচেতন কবি, মানব সম্প্রীতির কবি ও বৈশ্বিক চেতনার কবি । যুদ্ধ নয়—- শান্তি, বিভাজন নয় দৈশিক ও মানবিক ঐক্যই তার কাব্যের মূল সুর । তার প্রথম কাব্য ” অখণ্ড পৃথিবী চাই ” এবং এই কাব্যে এ সুরই প্রতিধ্বনিত হয়েছে । কবির ভাষায়ঃ
শান্তিপ্রিয় কবি আমি
শব্দবাণ ছুড়ি
পৃথিবীর সব অস্ত্রাগারে ।
—– —– —– —–
আমি শান্তি চাই
আমি দেখতে চাই
অস্ত্রমুক্ত অখণ্ড পৃথিবী ।
( অখণ্ড পৃথিবী চাইঃ পৃ-৭)
এই মাত্র যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করেছে তার জন্য এক ফোঁটা দুধ বরাদ্দ নেই কিন্তু জন্মের পূর্বেই তাকে হত্যা করার জন্য বরাদ্দ রয়েছে লক্ষ কোটি ডলার-পাউণ্ডের অস্ত্র । তাই কবির উচ্চারণঃ
ক
যেখানে ক্ষুধার্ত শিশু
পায়না খেতে ভাত
অস্ত্রের পেছনে ছুটে
কোটি কোটি হাত
লাথি মারি আমি সেই
সভ্যতার মুখে
জাগো বিপ্লবী মানুষ
দাঁড়াও যুদ্ধ রুখে ।
( যুদ্ধনয় শান্তি চাইঃ পৃ-১৬)
খ
উলঙ্গ, হাড্ডিসার, ক্ষুধার্ত শিশু এক
পড়ন্ত সূর্যের দিকে হাত উচিয়ে
উঁকি মারে, তুলে ধরে থালা !
জীর্ণ থালা পূর্ণ করে সূর্যটাকে
পেতে চায় ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে চায়
মেটাতে চায় ক্ষুধার তীব্র জ্বালা !
( ভাস্করঃ পৃ- ১৮)
আমরা প্রতিদিন দেখি মেডিকেলের ফুটপাতে বিনা চিকিৎসায় মানুষ মরে, মৃত ছেলের কাফনের কাপড় কিনতে বিধবা মা ভিক্ষা করতে বের হয়, ড্রেনে, ডাস্টবিনে উচ্ছিষ্ট খাবার নিয়ে ক্ষুধার্ত মানুষ কাড়াকাড়ি করে । তাছাড়া বর্তমান পৃথিবীতে রয়েছে দেড়শত কোটি প্রান্তিক মানুষ—– তারা গাছতলায়, ফুটপাতে জীবন যাপন করে । তখন কবির উচ্চারণঃ
ক
খাবারগুলো সমানভাবে
দাও বিলিয়ে তাদের হাতে
খায়নি যারা পেট ভরে ভাত
একবেলাও —- দিনে-রাতে !
( বিধাতার কাছে প্রশ্ন / পৃঃ ১৭)
খ
প্রয়োজনে ছিঁড়ে খাবো একটি মাত্র পরোটা
সাম্যের সারিতে বসে কোটি-কোটি জনতা !
(শান্তির দূতঃ পৃ- ২১)
এই বিষয়গুলো কবির কাব্যে শুধু কালিক ও দৈশিক নয় —- বৈশ্বিক ভাবনায় কাব্যরূপ পেয়েছে । কবির এই ভাবনাই কবিকে বিশ্বজনের কাছে পরিচিত করে তুলেছে । কবিকে অভিনন্দিত করেছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, নেলসন মেন্ডেলা ।
কবি চান যুদ্ধ নয়—- শান্তি—- বিশ্বশান্তি । তার কণ্ঠে শুনি—-
শান্তিকামী মানুষের
সুন্দর এ পৃথিবীতে
যতো অস্ত্রাগার আছে
এক ফুৎকারে উড়িয়ে দেবো,
বারুদ গিলে খাবো,
অস্ত্রগলিয়ে শিসা করে
যতো ধ্বংস-যন্ত্র আছে
পায়ে পিষে ছাতু করে নেবো ।
অখণ্ড পৃথিবীকে
অস্ত্রমুক্ত, নিরমল করতে
যদি ফাঁসির মঞ্চে জীবন দিতে হয়
হাসি মুখে তাও দেবো —–
——– ——– ——–
যুদ্ধ নয় শান্তি চাই
অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব চাই ।
(ফাঁসির মঞ্চ থেকেঃ পৃ- ৫৭)
আজকের এই খুনে রাঙা পৃথিবীকে, যুদ্ধের দামামায় উম্মত্ত পৃথিবীকে, শান্তিপ্রিয় মানুষকে এবং সংকীর্ণ বৃত্ত ও বিভাজিত আলে নিবদ্ধ মানুষকে যদি রক্ষা করতে হয় তবে অস্ত্র নয় —- কাব্য, সাহিত্য ও শিল্পের মাধ্যমেই মানবৈক্য ও বিশ্বশান্তি রক্ষা করতে হবে । তাই কবির উচ্চারণঃ
ক
একটা বারুদকণা যেমন
পুড়িয়ে দিতে পারে—–
একটি ঘর, বাড়ি,পাড়া, মহল্লা
তথা গ্রামের পর গ্রাম,
তেমনি আমার
একটিমাত্র শব্দও
ভেঙ্গে দিতে পারে
শান্তি দ্রোহী
সন্ত্রাসী
তথা সাম্রাজ্যবাদের ভিত ।
(আমার কবিতাঃ পৃ-২৭)
খ
দেশে দেশে
রাস্তায় রাস্তায়
জনতার মিছিল—–
হাতে প্ল্যাকার্ড
বুকে পিঠে স্লোগান লেখা
মুখে আকাশবিদারী উচ্চারণ;
যুদ্ধ নয় শান্তি চাই
অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব চাই ।
(স্লোগানঃ পৃ-৫১)
কবি এখলাসুর রাহমান আত্মপ্রত্যয়ী কবি, আত্মবিশ্বাসী কবি । তাই পৃথিবীর সকল কবি’র প্রতি সম্মান দেখিয়ে দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেনঃ
কবিদের কোনো দেশ থাকে না
থাকে না ভৌগলিক কোনো সীমারেখা
——— ———- ———
কবি নয় একা কেউ
সুখ-দুঃখ্যের সঙ্গী তার
কোটি জনতার ঢেউ ।
(কবিদের কোনো দেশ থাকে নাঃ পৃ-২২)
জীবন ও জগৎকে জানার তীব্র জ্ঞানপিপাসা
নিয়ে বিনয়ের সহিত কবির সরল উচ্চারণঃ
বিদ্যার যদি সাগর হয়
আর আমি হই ঘুমে
সাহারার কোনো এক সীমান্তে
তাহলে এখন আমার
ঘুম ভেঙেছে মাত্র ।
(জ্ঞানবৃক্ষঃ পৃ-৬৪)
কবির এই বৈশ্বিক চেতনা, বিশ্বমানবৈক্যের সুর ও বিশ্বশান্তির প্রয়াসের জন্য আমি তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি । এবং তার কাব্যের বহুল পাঠ ও প্রচার কামনা করছি ।